Collection : Prothom Alo
চট্টগ্রামের চার বৃহত্ কোম্পানি মিলে গঠন করেছে ক্যাপস বাংলাদেশ লিমিটেড। কেডিএস, এবিসি, পিএইচপি ও এস আলম গ্রুপের সমন্বয়ে গঠিত এই ক্যাপস বাংলাদেশ দুই হাজার ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে মৌলিক ইস্পাত কারখানা হট রোল ইস্পাত স্থাপনে।
জানা গেছে, ইতিমধ্যে কারখানা স্থাপনের জন্য জায়গা ঠিক হয়ে গেছে। কাজ শুরু হবে আগামী বছরের শুরুতে। শেষ হবে ২০১৩ সালে। এক লাখ টন উত্পাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এই ইস্পাত কারখানার ৬০ শতাংশ পণ্য স্থানীয় বাজারে বিক্রি হবে। আর বাকি ৪০ শতাংশ রপ্তানি করা হবে। কারখানা স্থাপন করে দেবে ইতালির ড্যানিয়েলি করপোরেশন।
প্রসঙ্গত, দশমিক পাঁচ থেকে এক মিলিমিটার পুরুত্বের সিআই শিট তৈরি হয় কোল্ড রোল ইস্পাত থেকে। বিভিন্ন পুরুত্বে এসব সিআই শিট দিয়ে তৈরি হয় বাসের কাঠামো, ঢেউটিন, কোমল পানীয়র ক্যান। আর এই কোল্ড রোল কারখানায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয় হট রোল ইস্পাত। হট রোলের একটি স্ট্রিপ ৯০০ থেকে এক হাজার ৬০০ মিলিমিটার চওড়া এবং ১৫ মিলিমিটার পুরু হয়। দেশে পাঁচ লাখ টন চাহিদার পুরোটাই এখন বিদেশ থেকে আমদানি করে মেটানো হয়।
পরিকল্পনার শুরু: প্রায় এক দশক আগে চট্টগ্রামের বৃহত্ ব্যবসায়ী গ্রুপগুলো দেশে একটি হট রোলিং মিল স্থাপনের ব্যাপারে স্বপ্ন দেখতে থাকে। কিন্তু ২০০৭ সাল পর্যন্ত টাটা এ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখানোর কারণে স্থানীয় উদ্যোক্তারা অনেকটাই চুপচাপ থাকেন। মূলত টাটার ৩০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ পরিকল্পনার সামনে তাঁদের পরিকল্পনা খড়কুটোর মতো ভেসে যায়।
কিন্তু ২০০৭ সালে টাটা তাদের পরিকল্পনা বাতিল করলে নতুনভাবে ভাবতে শুরু করেন দেশীয় উদ্যোক্তারা। বিভিন্ন দেশ ঘুরে, কারখানা দেখে স্বপ্ন বাস্তবে দানা বাঁধতে থাকে। ২০০৮ সালে চট্টগ্রামের এস আলম, পিএইচপি, কেডিএস ও আবুল খায়ের গ্রুপ যৌথভাবে বার্ষিক ২০ লাখ টন উত্পাদন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি হট রোলিং মিল স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ভারতের এসার গ্রুপের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। কিন্তু সরকার চট্টগ্রামে শিল্পকারখানায় নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়া স্থগিত রাখলে এসার গ্রুপের সঙ্গে বিনিয়োগের সে পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
তবে থেমে থাকেনি পরিকল্পনা। এস আলম, কেডিএস, পিএইচপি ও এবিসি মিলে নতুন কনসোর্টিয়াম গঠন করে। প্রতিষ্ঠানগুলোর নামের আদ্যক্ষর নিয়ে এর নামকরণ হয় ক্যাপস। ইতিমধ্যে ক্যাপস কারখানা তৈরির জন্য ইতালির ড্যানিয়েলি করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। ২০১০ সাল থেকে কাজ শুরু হয়ে যাবে। শেষ হবে ২০১৩ সালে। আর উত্পাদন শুরু হবে ২০১৪ সাল থেকে।
কোথায় হবে কারখানা: কর্ণফুলী সার কারখানার সঙ্গে লাগোয়া ১০০ একর জমিতে এই হট রোলিং কারখানা স্থাপন করা হবে। প্রাথমিক হিসাবে ১০ লাখ টনের বার্ষিক উত্পাদন ক্ষমতার এই ইস্পাত কারখানার পেছনে মোট বিনিয়োগ হবে দুই হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুত্ উত্পাদন কেন্দ্রও আছে।
দ্বৈত জ্বালানির ভিত্তিতে এই কারখানা গড়ে উঠবে। শুরুতে জ্বালানি হিসেবে ফার্নেস অয়েল ব্যবহার করা হবে। তারপর গ্যাস পাওয়া গেলে গ্যাস ব্যবহার করা হবে। বর্তমানে চট্টগ্রামে শিল্পকারখানায় গ্যাস সংযোগ বন্ধ আছে।
অর্থায়ন: দুই হাজার ২০০ কোটি টাকার এই প্রকল্পে ৭০ শতাংশ বিনিয়োগ করবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান, আর বাকিটা উদ্যোক্তারা নিজে। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান হিসেবে ভূমিকা পালন করতে রাজি হয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। একই সঙ্গে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকও (আইডিবি) প্রকল্পে অর্থায়ন করবে।
উদ্যোক্তাদের বক্তব্য: এ ব্যাপারে ক্যাপসের পরিচালক আব্দুস সামাদ লাবু প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিগত এক দশক ধরেই আমরা স্বপ্ন দেখছি বাংলাদেশে হট রোলিং মিল করার। আমরা একটু ধীরগতিতে এগিয়ে ছিলাম। কারণ, টাটা এখানে এ খাতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছিল। তারপর ভারতের এসার গ্রুপের সঙ্গে ২০০৮ সালে চট্টগ্রামের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা একটি হট রোলিং মিল করার জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। সেই পরিকল্পনায় আমরাও ছিলাম। কিন্তু পরে দেশে গ্যাস সংকটের কারণে এসার গ্রুপ পিছিয়ে যায়। এখন আমরা ফার্নেস অয়েল দিয়ে প্রথম কারখানা চালু করব। পরে সরবরাহ নিশ্চিত হলে গ্যাস ব্যবহার হবে।’
0 comments:
Post a Comment