Collection : Prothom Alo
বিশ্বমন্দার কারণে দেশের রপ্তানি আয়ের ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। চলতি ২০০৯-১০ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রপ্তানি আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ কমেছে।
এ সময় দেশের প্রধান রপ্তানি খাত নিট ও ওভেন পোশাকের পাশাপাশি হিমায়িত খাদ্য, চামড়া, হোম টেক্সটাইলসহ কয়েকটি পণ্যের রপ্তানি আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে কমে গেছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত তথ্যানুসারে, ২০০৯-১০ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়কালে ৩৮৭ কোটি ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা এই সময়কালের লক্ষ্যমাত্রা ৪৩২ কোটি ৯৬ লাখ ডলারের চেয়ে ১০ দশমিক ৬০ শতাংশ কম।
অন্যদিকে ২০০৮-০৯ অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল প্রায় ৪৩৮ কোটি ১৪ লাখ ডলার।
তবে সার্বিকভাবে শুধু সেপ্টেম্বর মাসে রপ্তানি আয় গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় ২৮ দশমিক ২৭, আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ কমে গেছে।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ১০৬ কোটি ডলারের কিছু বেশি রপ্তানি আয় হয়েছে। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ১৪৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
আলোচ্য সময়কালে লক্ষ্যমাত্রা ও আগের বছরের একই সময়ের রপ্তানি আয়ের চেয়ে বেশি হওয়া—উভয় ক্ষেত্রেই এগিয়ে আছে পাটপণ্য, ইলেকট্রনিকস, কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও কাট ফ্লাওয়ার বা ফোলিয়েজ। তবে কাঁচা পাট, টেরিটাওয়েল, মেলামাইন টেবিলওয়্যার, ক্যামেরার যন্ত্রাংশের রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কমেছে। আর শাকসবজি, তামাক, পাদুকা, পেট্রোলিয়ামজাত প্রভৃতি পণ্যের রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বাড়লেও আগের বছরের চেয়ে কমেছে।
চলতি বছর জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়কালে পরিমাণগত দিক থেকে রপ্তানি আয়ের শীর্ষে রয়েছে নিট পোশাক খাত। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ওভেন পোশাক খাত।
তবে এ সময়কালে নিট পোশাকের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ দশমিক ৮৬ এবং ওভেন পোশাকের ক্ষেত্রে ১৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ কমে গেছে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে ১৬৫ কোটি ৩৯ লাখ ডলারের নিট পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের ১৮৩ কোটি ডলারের তুলনায় ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ কম।
আর আলোচ্য সময়ে ১৩৭ কোটি ৬৬ লাখ ডলারের ওভেন পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের ১৫২ কোটি ৫১ লাখ ডলারের রপ্তানির চেয়ে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ কম।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নিট পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্বমন্দার প্রভাবে দেশের পোশাক রপ্তানিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে পোশাকশিল্প মালিকেরা মন্দার প্রভাব দেশের পোশাকশিল্পে পড়বে—এ কথা বলে এলেও সরকারি মহল তা আমলে নেয়নি। মন্দা রোধে নেয়নি কোনো কার্যকর কোনো ব্যবস্থা। আগে থেকে ব্যবস্থা নিলে এ ধরনের বিপর্যয় হয়তো ঠেকানো যেত।’ রপ্তানিতে আরও বিপর্যয় যাতে না হয়, এ জন্য তিনি দ্রুত সরকারি সহায়তার সুপারিশ করেন।
এদিকে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী অক্টোবর মাসেও রপ্তানি আয় কমার আশঙ্কা করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রতিযোগী দেশগুলোর সরকার তাদের শিল্পকারখানার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ ও পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করায় তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বেড়ে গেছে। তাতে তারা আন্তর্জাতিক বাজার দখল করে নিচ্ছে।
সরকারের কাছ থেকে নীতি-সহায়তা পেলে এই ‘আপত্কালীন সংকট’ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন বিজিএমইএর সভাপতি।
চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ১০ কোটি ১৮ লাখ ডলারের হিমায়িত খাদ্য, তিন কোটি ৬০ লাখ ডলারের কাঁচা পাট, আট কোটি ৫৬ লাখ ডলারের পাটপণ্য, পাঁচ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের চামড়া, ছয় কোটি ৯৬ লাখ ডলারের হোম টেক্সটাইল ও পাঁচ কোটি ৬২ লাখ ডলারের পাদুকা রপ্তানি হয়েছে।
এ ছাড়া দুই কোটি ৬২ লাখ ডলারের বাইসাইকেল, এক কোটি ডলারের ওষুধ, দুই কোটি ৯৩ লাখ ডলারের রাসায়নিক সার, এক কোটি ৩৪ লাখ ডলারের তাজা শাকসবজি ও এক কোটি ৯৩ লাখ ডলারের টেক্সটাইল ফেব্রিক্স পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
0 comments:
Post a Comment