পুঁজিবাজারে বুকবিল্ডিং পদ্ধতি কার্যকর করা হলে উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী উভয়ই উপকৃত হবেন। শুধু তাই নয়, শেয়ারের ন্যায্যমূল্যও নিশ্চিত হবে বুকবিল্ডিং প্রবর্তন করা হলে। একই সঙ্গে বড় বড় কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি অনেকটাই সহজ হবে এবং তারা তাদের শেয়ারের ন্যায্যমূল্য পাবে।
গতকাল সকালে রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে ‘বুকবিল্ডিং মেথড ফর প্রাইজ ডিসকভারি’ বিষয়ক এক সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রেসিডেন্ট মো. রকিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) চেয়ারম্যান জিয়াউল হক খন্দকার।
সেমিনারে বুকবিল্ডিংয়ের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল হান্নান জোয়ার্দার, ‘পটেনসিয়াল অফ বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট’ বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিএসইর এজিএম সৈয়দ আল আমিন রহমান। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডিএসইর সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম। সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন ডিএসইর ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. শাকিল রিজভী, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সতীপতি মৈত্র প্রমুখ। সেমিনারে মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ, ডিএসইর সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আহমেদ রশিদ লালি, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী স্যামসন এইচ চৌধুরী, সামিট এলায়েন্স পোর্টের এমডি মোহাম্মদ রিজভী প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসইসির চেয়ারম্যান জিয়াউল হক খন্দকার বলেন, বুকবিল্ডিং পদ্ধতি হচ্ছে পর্যাপ্ত প্রচারণার মাধ্যমে আইপিও প্রাইজ নির্ধারণ করা। আর এ পদ্ধতিতে প্রাইজ নির্ধারণ করা হলে কোম্পানিগুলো তাদের শেয়ারের ন্যায্যমূল্যে পাবে এবং বিনিয়োগকারীরাও উপকৃত হবেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বর্তমানে এ পদ্ধতি খুবই প্রয়োজনীয়।
তিনি বলেন, বুকবিল্ডিং পদ্ধতি অনুসরণ করা হলে অনেক বড় বড় কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে উৎসাহিত হবে। আর এসব কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে বাজারে ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়বে। এতে বিনিয়োগকারীদের হাতেগোনা কয়েকটি মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানির শেয়ারের ওপর নির্ভর করতে হবে না।
এসইসির চেয়ারম্যান আরো বলেন, ১৯৯৫ সালে ভারতের পুঁজিবাজারে বুকবিল্ডিং পদ্ধতি কার্যকর করা হয়েছে। সেখানে বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ার ছাড়া যে বাস্তব সম্মত হয়েছে, ইতিমধ্যে তা প্রমাণিত হয়েছে। এ পদ্ধতি সুফল বিনিয়োগকারী ও কোম্পানিগুলো পেতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, গত ২ বছরে পুঁজিবাজারে যত আইপিও এসেছে গড়ে প্রতিটি আইপিও ১০ থেকে ১৫ গুণ ওভার সাবক্রিপশন হয়েছে। বাজারে ভালো শেয়ারের সরবরাহ কম থাকায় এটা হচ্ছে।
জিয়াউল হক খন্দকার আরো বলেন, শেয়ারবাজারে উন্নতি করতে হলে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে হবে। আর এ আস্থা বাড়ানোর জন্য এসইসি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ইতিমধ্যে মার্জিন ঋণের বিষয়ে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে এবং বিনিয়োগকারীদের সেবার মান বৃদ্ধির জন্য রিফান্ড ওয়ারেন্ট বিনিয়োগকারীদের অ্যাকাউন্টে জমা করার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
ডিএসইর প্রেসিডেন্ট মো. রকিবুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব। পৃথিবীর প্রায় অধিকাংশ দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে পুঁজিবাজার অবদার রাখছে। বাংলাদেশের পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করে দেশের দারিদ্র্য বিমোচন করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির শেয়ারগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে বাজারে ছেড়ে দেয়া উচিত।
ডিএসইর সভাপতি বলেন, বাজারের সূচক বাড়লে বা কমলে কিছু যায় আসে না। সূচক ১ হাজার হলেও যেমন কিছু যায় আসে না। তেমনি ৪ হাজার হলেও কোনো সমস্যা নেই। ভারতে সূচক এক দিনে ২১ হাজার থেকে ৮ হাজারে নেমে এসেছিল। তারপরও বাজার স্বাভাবিক ছিল। বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হননি। তিনি বলেন, মৌলভিত্তির শেয়ারে বিনিয়োগ করলে এবং ‘জেড’ গ্রুপে বিনিয়োগ না করলে লোকসানের কোনো আশঙ্কা নেই। তবে অতিমূল্যায়িত শেয়ার কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর দায়দায়িত্ব ডিএসই নেবে না।
মো. রকিবুর রহমান বলেন, নন-রেসিডেন্স ইন্ডিয়ান (এনআরআই) ও নন-রেসিডেন্স চায়নিজরা (এনআরসি) যদি তাদের দেশের উন্নয়ন করতে পারে তাহলে নন-রেসিডেন্স বাংলাদেশিরা (এনআরবি) কেন আমাদের দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে সরকারকে পুঁজিবাজারে এনআরবিদের বিনিয়োগের আরো সুযোগ করে দিতে হবে।
মূল প্রবন্ধে এসইসির নির্বাহী পরিচালক আবদুল হান্নান জোয়ার্দার বলেন, ১৯৮০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং কানাডায় প্রথম বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। তিনি বলেন, এ পদ্ধতিতে ইস্যুর আকার অর্থাৎ পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকা হলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য ২০ শতাংশ, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের জন্য ১০ শতাংশ এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা থাকবে। অবশিষ্ট ৬০ শতাংশ শেয়ার বিনিয়োগকারী ও কোম্পানির পরিচালকদের জন্য থাকবে। ইস্যুর সাইজ ৫০ কোটি থেকে ১০০ কোটি টাকা হলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা থাকবে। বাকি ১০ শতাংশ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের জন্য, ১০ শতাংশ এনআরবিদের এবং ৫০ শতাংশ কোম্পানির পরিচালক ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য নির্ধারিত থাকবে।
0 comments:
Post a Comment