Collction : Sharebiz
গত ২ দশকে দেশের হাউজিং ও রিয়েল এস্টেট খাতে অসংখ্য কোম্পানি আত্মপ্রকাশ করলেও পুঁজিবাজারে তারা আসছে না। বিষয়টি কিভাবে দেখছেন আপনি?
তৌফিক এম সেরাজ : ব্যবসায়িক ভিত্তিতে যে আবাসন শিল্প রাজধানী ঢাকাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে তা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে গত ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে। যদিও বিগত প্রায় আড়াই দশক ধরে দেশে এ খাতের সূচনা হয়েছে, যা ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে। এটি উৎপাদনশীল শিল্প খাতের মতো প্রথাগত কোনো শিল্প খাত নয়। এখানে দক্ষ-অদক্ষ অসংখ্য শ্রমিক দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করে। কার্যক্রম পরিচালনা করছে ছোট-বড় প্রায় ৬০০ ডেভেলপার ও হাউজিং প্রতিষ্ঠান। এদের অনেকের প্রকল্পের সংখ্যা মাত্র ১টি আবার কারো শতাধিক। পুঁজিবাজারে আসতে হলে প্রতি বছর যে টার্নওভার দরকার তা ধারাবাহিকভাবে অর্জন করতে পারছে না অনেক প্রতিষ্ঠানই। পুঁজিবাজারে যেসব বিনিয়োগকারী এ খাতের প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করবেন তাদেরও তো আকৃষ্ট করতে হবে। না হলে তারাই বা কেন বিনিয়োগ করবেন। তবে আমার জানা মতে, এ খাতের যারা ধারাবাহিকভাবে উল্লেখযোগ্য টার্নওভার অর্জন করছেন, তাদের অনেকেই আগামী ২-১ বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে প্রাথমিক শেয়ার ছেড়ে মূলধন সংগ্রহের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
শেয়ার বিজ্ কড়চা : হাউজিং ও রিয়েল এস্টেট খাতের যেসব প্রতিষ্ঠান আগামীতে পুঁজিবাজারে আসতে পারে এ মুহূর্তে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কত?
তৌফিক এম সেরাজ : রিয়েল এস্টেট খাত অ্যাসোসিয়েশনে এখন পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫০০ থেকে ৬০০। ১৯৮৮ সালে মাত্র ৭ জন্য সদস্য ছিল রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব)। এত দিনে এ সংখ্যা হয়তো ৬০০তে উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে গত ৫-৬ বছরে যারা বাজারে এসেছেন তাদের প্রকল্প সংখ্যাও অনেক কম। তবে দীর্ঘ সময় ধরে যারা সুনামের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন তাদের অনেকেরই পুঁজিবাজারে প্রাথমিক শেয়ার ছাড়ার মতো সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। রিয়েল এস্টেট সেক্টরের অংশীদার হিসেবে আমি কারো নাম উল্লেখ করতে চাই না। তবে যারা শেয়ারবাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তারাই বলতে পারবেন রিয়েল এস্টেট সেক্টরে পুঁজিবাজারে আসার মতো প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কত। এ ‘গিভ অ্যান্ড টেক’র ভিত্তিতে পুঁজিবাজারে এসে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি যেমন লাভবান হবে, তেমনই লাভবান হবেন বিনিয়োগকারীরাও। কিন্তু পুঁজিবাজারে এসে কোনো কোম্পানিকে যদি হতাশাব্যঞ্জক চিত্রে দেখা যায় তাহলে তা যেমন এ খাতের জন্য মঙ্গলজনক হবে না, তেমনি জাতীয় অর্থনীতি কিংবা পুঁজিবাজারের জন্যও নয়। আমি মনে করি, রিয়েল এস্টেট সেক্টর নিয়ে জাতীয় সংবাদ মাধ্যমেও নেতিবাচক সংবাদ বেশি প্রকাশিত হয়। সংবাদ মাধ্যমগুলোতে যদি এ খাতের উন্নয়ন এবং অগ্রগতির সংবাদ বেশি প্রচারিত হতো তাহলে পুঁজিবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদেরও এ খাতের প্রতি আগ্রহ তৈরি হতো। আবাসন সমস্যা সমাধানে বা জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে এ খাত যে ভূমিকা রাখছে সেগুলো যদি সংবাদ মাধ্যমে প্রস্ফুটিত হতো তাহলে অনেকেই আগ্রহ বোধ করতেন। পুঁজিবাজারে এলেই যে বিনিয়োগকারীরা এ খাতের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে উঠবেন তাও বোধহয় সত্যি নয়। কাজেই সুনাম রয়েছে এমন কোম্পানিকেই প্রথমত পুঁজিবাজারে আসতে হবে। প্রাথমিকভাবে এ ধরনের কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে শেয়ার ছাড়ার পর যদি দেখা যায়, উদ্যোক্তা এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী উভয়ই লাভবান হয়েছেন তাহলে পর্যায়ক্রমে অন্য কোম্পানিগুলোর বাজারে প্রবেশের পথ সুগম হবে।
শেয়ার বিজ্ কড়চা : আপনি এ খাতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার অভাবের কথা বিভিন্ন সময় বলেছেন, এ ব্যাপারে কিছু বলুন?
তৌফিক এম সেরাজ : এ খাত অনেকটা পথ শিশুর মতো। অনাদরে-অবহেলায় ধীরে ধীরে আজকের এ পর্যায়ে এসেছে। তাই সক্ষম কোম্পানিগুলো যাতে পর্যায়ক্রমে পুঁজিবাজারে প্রবেশ করতে পারে সে ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতার ব্যাপারে আমি আশাবাদী।
শেয়ার বিজ্ কড়চা : বিগত বছরগুলোতে জাতীয় বাজেটে রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ সরকার দিয়েছিল, তা কি এ খাতের জন্য প্রণোদনামূলক নয়?
তৌফিক এম সেরাজ : আমি ব্যক্তিগতভাবে কালো টাকা আছে বলে মনে করি না। এটিকে অপ্রদর্শিত আয় বলা যেতে পারে। শুধু রিয়েল এস্টেট খাত কেন জাতীয় অর্থনীতির মূল প্রবাহে এ অর্থ যুক্ত হলেও তা অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে। আমি নিশ্চিত, আমাদের অর্থনীতিতে অপ্রদর্শিত অর্থ আগেও ছিল, এখনো রয়েছে। আরো অনেক দিন হয়তো থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত অর্থনীতি ফরমাল পর্যায়ে না আসবে। জাতীয় অর্থায়ন ব্যবস্থাপনা যতক্ষণ পর্যন্ত স্বচ্ছ পর্যায়ে উন্নীত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত অপ্রদর্শিত অর্থ থাকবে। কাজেই এটা শুধু রিয়েল এস্টেট সেক্টর নয়, বরং অর্থনীতির সব খাতকেই চাঙ্গা করতে পারে। বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতায় ফ্ল্যাট বা বাড়ি এখনো খুব প্রয়োজনীয়। যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ একটি বাড়ি ও ফ্ল্যাট বা বসত জমির মালিক না হন ততক্ষণ পর্যন্ত নিজে অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে সুরক্ষিত মনে করেন না। সেজন্য একজন মানুষের হাতে অর্থ সঞ্চিত হলে প্রথমেই একটি বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট বা জমি কেনার চেষ্টা করেন। সেটি প্রদর্শিত কিংবা অপ্রদর্শিত যে অর্থেই হোক না কেন। সেজন্য অপ্রদর্শিত আয়ের অর্থে ফ্ল্যাট কিংবা জমি কেনার সুযোগ আগের বছরগুলোতে ছিল, এখনো রয়েছে। বিগত কয়েক বছরে রিয়েল এস্টেট খাত খুবই দুর্বল ছিল, তবে এখন আবার চাঙ্গা হওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ চাঙ্গাভাব ধারাবাহিকভাবে না থাকলে হাউজিং প্রতিষ্ঠানগুলো পুঁজিবাজারে আসতে পারবে না। কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি না থাকলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর আরো সমস্যার সৃষ্টি হয়। রিয়েল এস্টেট খাতের গত ২ দশকের পরিসংখ্যান নিলে দেখা যাবে, মাঝে মধ্যেই এ খাতকে বেশ মন্দাবস্থায় পড়তে হয়েছে। বিগত আড়াই বছরেও বড় ধরনের মন্দার মধ্যে ছিল রিয়েল এস্টেট খাত। হঠাৎ নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে গিয়েছে। তবে ধীরে ধীরে এ খাতে স্থিতিশীলতা আসতে শুরু করেছে এবং প্রবৃদ্ধিও বাড়ছে। যদি সরকার ব্যবসাবান্ধব নিয়মনীতি অনুসরণ করে তাহলে আবাসন খাত আরো উন্নত ও বিকশিত হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আগামী বছরগুলোতে এ খাতের বেশ কিছু কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসবে।
শেয়ার বিজ্ কড়চা : আপনারা দীর্ঘদিন ধরে রিয়েল এস্টেট খাতের জন্য ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমাতে বলেছেন, কিন্তু পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে কার্যক্রম সম্প্রসারণের কথা বলছেন না কেন?
তৌফিক এম সেরাজ : সেটি করতে হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ন্যূনতম বার্ষিক টার্নওভার ও পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রকল্প থাকতে হবে। এ বছর আমার ৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হলো আর আগামী বছর কিছুই নেই এ অবস্থায় পুঁজিবাজারে প্রবেশ সম্ভব নয়। রিয়েল এস্টেট সেক্টরের যে প্রতিষ্ঠানটি পুঁজিবাজারে আসবে তাকে পরবর্তী ১০ বছরের প্রকল্প বাস্তবায়ন লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে নিতে হবে। প্রতি বছর একাধিক নতুন প্রজেক্ট হাতে নিতে হবে এবং তার বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে।
শেয়ার বিজ্ কড়চা : পুঁজিবাজারে গ্রামীণফোনের মতো বহুজাতিক কোম্পানিও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। প্রতিনিয়ত সম্প্রসারিত হচ্ছে পুঁজিবাজার। এ সম্প্রসারণকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
তৌফিক এম সেরাজ : আমি পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ নই। তাই এ বিষয়ে মূল্যায়ন করতে চাই না।
শেয়ার বিজ কড়চা : আপনি শেলটেকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শুরু থেকেই। এ প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য সম্পর্কে বলবেন?
তৌফিক এম সেরাজ : শেলটেক ১৯৮৮ সাল থেকে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। আমরা শুরু থেকেই চেষ্টা চালিয়ে আসছি রিয়েল এস্টেট সেক্টরে একটি পৃথক ধারা বজায় রাখতে। বিভিন্ন সময় এর উত্থান-পতনও হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। গত কয়েক বছর ধরে বেশ বড় বড় প্রকল্প হাতে নিচ্ছি। এসব প্রকল্পে ন্যূনতম ১০০টি করে অ্যাপার্টমেন্ট থাকছে। আগামী বছর থেকে একই জায়গায় ২০০ অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের পরিকল্পনা নিতে যাচ্ছি। এ অবস্থায় আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে সব কিছু যদি ঠিকঠাক মতো চলে তাহলে আগামী ২০১১ সালের মধ্যে শেলটেকও পুঁজিবাজারে আসবে। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করেছি। ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ ইউনিটের নির্মাণ কাজ হাতে থাকবেÑ এটি যখন আমরা নিশ্চিত হবো তখন অবশ্যই পুঁজিবাজারে আসবো। আশা করছি, ২০১১ সালের মধ্যে সে লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে।
শেয়ার বিজ্ কড়চা : এ মুহূর্তে সরকারের কাছে আপনাদের প্রত্যাশা কি?
তৌফিজ এম সেরাজ : এ মুহূর্তে নতুন কিছু প্রত্যাশা করছি না। সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে নিয়মনীতির বেড়াজালে হাত-পা বেঁধে ফেললে ব্যবসা করা যাবে না। যে কোনো সেক্টরেই ভালো-মন্দ ব্যবসায়ী থাকেন। কেউ হয়তো ইচ্ছা বা অনিচ্ছা যে কারণেই হোক ভালো করতে পারেন না। এজন্য পুরো সেক্টরকে যদি নতুন নতুন আইনের বেড়াজালে বেঁধে ফেলা হয় তাহলে অগ্রসর হওয়া কঠিন হবে।
শেয়ার বিজ্ কড়চা : আপনারা দীর্ঘদিন উচ্চ মধ্যবিত্তের জন্য আবাসন পরিকল্পনা করেছেন। পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে আপনাদের আবাসন সম্প্রসারণ পরিকল্পনাটি কেমন?
তৌফিক এম সেরাজ : আমরা যখন পুঁজিবাজারে আসবো তখন আমাদের আবাসন পরিকল্পনা হবে যারা নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণী তাদের নিয়ে, উচ্চবিত্তের আবাসন নিয়ে নয়। আমাদের ভবিষ্যতে পরিকল্পনা হলো সীমিত আয়ের পরিবার যাতে ভাড়ার টাকায় অ্যাপার্টমেন্টের মালিক হতে পারেন সে ধরনের প্রকল্প হাতে নেয়া। ঢাকার প্রান্তিক এলাকাগুলোতে বড় বড় প্রকল্প হাতে নিয়ে বাস্তবায়ন করবো। পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করে স্যাটেলাইট শহর বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেবে শেলটেক।
শেয়ার বিজ্ কড়চা : এ পর্যন্ত শেলটেকের বাস্তবায়িত প্রকল্পের সংখ্যা কতটি? এ মুহূর্তের কার্যক্রমই বা কেমন?
তৌফিক এম সেরাজ : এ পর্যন্ত ১০০টির বেশি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে শেলটেক। ২ হাজারেরও বেশি অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি ও হস্তান্তর করা হয়েছে। এ মুহূর্তে ১ হাজারের বেশি ইউনিট নির্মাণাধীন। আগামী বছরগুলোতে কয়েক হাজার ইউনিট বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা সুনাম ঠিক রেখে নিজেদের অগ্রসর করার চেষ্টা চালাচ্ছি।
শেয়ার বিজ্ কড়চা : পুঁজিবাজারের খবর নিয়ে একটি দৈনিক পত্রিকা হিসেবে ‘শেয়ার বিজ্ কড়চা’কে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
তৌফিক এম সেরাজ : যারা এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তারা এ পত্রিকার মাধ্যমে উপকৃত হবেন বলেই মনে করছি। আগে এ ধরনের পত্রিকা ছিল না। এ পত্রিকা নিশ্চয়ই শেয়ারবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের উপকারে আসবে।
শেয়ার বিজ্ কড়চা : আপনাকে ধন্যবাদ সময় দেয়ার জন্য।
তৌফিক এম সেরাজ : ধন্যবাদ ‘শেয়ার বিজ্ কড়চা’কে।
তৌফিক এম সেরাজ : ব্যবসায়িক ভিত্তিতে যে আবাসন শিল্প রাজধানী ঢাকাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে তা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে গত ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে। যদিও বিগত প্রায় আড়াই দশক ধরে দেশে এ খাতের সূচনা হয়েছে, যা ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে। এটি উৎপাদনশীল শিল্প খাতের মতো প্রথাগত কোনো শিল্প খাত নয়। এখানে দক্ষ-অদক্ষ অসংখ্য শ্রমিক দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করে। কার্যক্রম পরিচালনা করছে ছোট-বড় প্রায় ৬০০ ডেভেলপার ও হাউজিং প্রতিষ্ঠান। এদের অনেকের প্রকল্পের সংখ্যা মাত্র ১টি আবার কারো শতাধিক। পুঁজিবাজারে আসতে হলে প্রতি বছর যে টার্নওভার দরকার তা ধারাবাহিকভাবে অর্জন করতে পারছে না অনেক প্রতিষ্ঠানই। পুঁজিবাজারে যেসব বিনিয়োগকারী এ খাতের প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করবেন তাদেরও তো আকৃষ্ট করতে হবে। না হলে তারাই বা কেন বিনিয়োগ করবেন। তবে আমার জানা মতে, এ খাতের যারা ধারাবাহিকভাবে উল্লেখযোগ্য টার্নওভার অর্জন করছেন, তাদের অনেকেই আগামী ২-১ বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে প্রাথমিক শেয়ার ছেড়ে মূলধন সংগ্রহের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
শেয়ার বিজ্ কড়চা : হাউজিং ও রিয়েল এস্টেট খাতের যেসব প্রতিষ্ঠান আগামীতে পুঁজিবাজারে আসতে পারে এ মুহূর্তে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কত?
তৌফিক এম সেরাজ : রিয়েল এস্টেট খাত অ্যাসোসিয়েশনে এখন পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫০০ থেকে ৬০০। ১৯৮৮ সালে মাত্র ৭ জন্য সদস্য ছিল রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব)। এত দিনে এ সংখ্যা হয়তো ৬০০তে উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে গত ৫-৬ বছরে যারা বাজারে এসেছেন তাদের প্রকল্প সংখ্যাও অনেক কম। তবে দীর্ঘ সময় ধরে যারা সুনামের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন তাদের অনেকেরই পুঁজিবাজারে প্রাথমিক শেয়ার ছাড়ার মতো সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। রিয়েল এস্টেট সেক্টরের অংশীদার হিসেবে আমি কারো নাম উল্লেখ করতে চাই না। তবে যারা শেয়ারবাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তারাই বলতে পারবেন রিয়েল এস্টেট সেক্টরে পুঁজিবাজারে আসার মতো প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কত। এ ‘গিভ অ্যান্ড টেক’র ভিত্তিতে পুঁজিবাজারে এসে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি যেমন লাভবান হবে, তেমনই লাভবান হবেন বিনিয়োগকারীরাও। কিন্তু পুঁজিবাজারে এসে কোনো কোম্পানিকে যদি হতাশাব্যঞ্জক চিত্রে দেখা যায় তাহলে তা যেমন এ খাতের জন্য মঙ্গলজনক হবে না, তেমনি জাতীয় অর্থনীতি কিংবা পুঁজিবাজারের জন্যও নয়। আমি মনে করি, রিয়েল এস্টেট সেক্টর নিয়ে জাতীয় সংবাদ মাধ্যমেও নেতিবাচক সংবাদ বেশি প্রকাশিত হয়। সংবাদ মাধ্যমগুলোতে যদি এ খাতের উন্নয়ন এবং অগ্রগতির সংবাদ বেশি প্রচারিত হতো তাহলে পুঁজিবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদেরও এ খাতের প্রতি আগ্রহ তৈরি হতো। আবাসন সমস্যা সমাধানে বা জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে এ খাত যে ভূমিকা রাখছে সেগুলো যদি সংবাদ মাধ্যমে প্রস্ফুটিত হতো তাহলে অনেকেই আগ্রহ বোধ করতেন। পুঁজিবাজারে এলেই যে বিনিয়োগকারীরা এ খাতের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে উঠবেন তাও বোধহয় সত্যি নয়। কাজেই সুনাম রয়েছে এমন কোম্পানিকেই প্রথমত পুঁজিবাজারে আসতে হবে। প্রাথমিকভাবে এ ধরনের কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে শেয়ার ছাড়ার পর যদি দেখা যায়, উদ্যোক্তা এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী উভয়ই লাভবান হয়েছেন তাহলে পর্যায়ক্রমে অন্য কোম্পানিগুলোর বাজারে প্রবেশের পথ সুগম হবে।
শেয়ার বিজ্ কড়চা : আপনি এ খাতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার অভাবের কথা বিভিন্ন সময় বলেছেন, এ ব্যাপারে কিছু বলুন?
তৌফিক এম সেরাজ : এ খাত অনেকটা পথ শিশুর মতো। অনাদরে-অবহেলায় ধীরে ধীরে আজকের এ পর্যায়ে এসেছে। তাই সক্ষম কোম্পানিগুলো যাতে পর্যায়ক্রমে পুঁজিবাজারে প্রবেশ করতে পারে সে ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতার ব্যাপারে আমি আশাবাদী।
শেয়ার বিজ্ কড়চা : বিগত বছরগুলোতে জাতীয় বাজেটে রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ সরকার দিয়েছিল, তা কি এ খাতের জন্য প্রণোদনামূলক নয়?
তৌফিক এম সেরাজ : আমি ব্যক্তিগতভাবে কালো টাকা আছে বলে মনে করি না। এটিকে অপ্রদর্শিত আয় বলা যেতে পারে। শুধু রিয়েল এস্টেট খাত কেন জাতীয় অর্থনীতির মূল প্রবাহে এ অর্থ যুক্ত হলেও তা অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে। আমি নিশ্চিত, আমাদের অর্থনীতিতে অপ্রদর্শিত অর্থ আগেও ছিল, এখনো রয়েছে। আরো অনেক দিন হয়তো থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত অর্থনীতি ফরমাল পর্যায়ে না আসবে। জাতীয় অর্থায়ন ব্যবস্থাপনা যতক্ষণ পর্যন্ত স্বচ্ছ পর্যায়ে উন্নীত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত অপ্রদর্শিত অর্থ থাকবে। কাজেই এটা শুধু রিয়েল এস্টেট সেক্টর নয়, বরং অর্থনীতির সব খাতকেই চাঙ্গা করতে পারে। বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতায় ফ্ল্যাট বা বাড়ি এখনো খুব প্রয়োজনীয়। যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ একটি বাড়ি ও ফ্ল্যাট বা বসত জমির মালিক না হন ততক্ষণ পর্যন্ত নিজে অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে সুরক্ষিত মনে করেন না। সেজন্য একজন মানুষের হাতে অর্থ সঞ্চিত হলে প্রথমেই একটি বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট বা জমি কেনার চেষ্টা করেন। সেটি প্রদর্শিত কিংবা অপ্রদর্শিত যে অর্থেই হোক না কেন। সেজন্য অপ্রদর্শিত আয়ের অর্থে ফ্ল্যাট কিংবা জমি কেনার সুযোগ আগের বছরগুলোতে ছিল, এখনো রয়েছে। বিগত কয়েক বছরে রিয়েল এস্টেট খাত খুবই দুর্বল ছিল, তবে এখন আবার চাঙ্গা হওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ চাঙ্গাভাব ধারাবাহিকভাবে না থাকলে হাউজিং প্রতিষ্ঠানগুলো পুঁজিবাজারে আসতে পারবে না। কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি না থাকলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর আরো সমস্যার সৃষ্টি হয়। রিয়েল এস্টেট খাতের গত ২ দশকের পরিসংখ্যান নিলে দেখা যাবে, মাঝে মধ্যেই এ খাতকে বেশ মন্দাবস্থায় পড়তে হয়েছে। বিগত আড়াই বছরেও বড় ধরনের মন্দার মধ্যে ছিল রিয়েল এস্টেট খাত। হঠাৎ নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে গিয়েছে। তবে ধীরে ধীরে এ খাতে স্থিতিশীলতা আসতে শুরু করেছে এবং প্রবৃদ্ধিও বাড়ছে। যদি সরকার ব্যবসাবান্ধব নিয়মনীতি অনুসরণ করে তাহলে আবাসন খাত আরো উন্নত ও বিকশিত হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আগামী বছরগুলোতে এ খাতের বেশ কিছু কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসবে।
শেয়ার বিজ্ কড়চা : আপনারা দীর্ঘদিন ধরে রিয়েল এস্টেট খাতের জন্য ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমাতে বলেছেন, কিন্তু পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে কার্যক্রম সম্প্রসারণের কথা বলছেন না কেন?
তৌফিক এম সেরাজ : সেটি করতে হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ন্যূনতম বার্ষিক টার্নওভার ও পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রকল্প থাকতে হবে। এ বছর আমার ৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হলো আর আগামী বছর কিছুই নেই এ অবস্থায় পুঁজিবাজারে প্রবেশ সম্ভব নয়। রিয়েল এস্টেট সেক্টরের যে প্রতিষ্ঠানটি পুঁজিবাজারে আসবে তাকে পরবর্তী ১০ বছরের প্রকল্প বাস্তবায়ন লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে নিতে হবে। প্রতি বছর একাধিক নতুন প্রজেক্ট হাতে নিতে হবে এবং তার বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে।
শেয়ার বিজ্ কড়চা : পুঁজিবাজারে গ্রামীণফোনের মতো বহুজাতিক কোম্পানিও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। প্রতিনিয়ত সম্প্রসারিত হচ্ছে পুঁজিবাজার। এ সম্প্রসারণকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
তৌফিক এম সেরাজ : আমি পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ নই। তাই এ বিষয়ে মূল্যায়ন করতে চাই না।
শেয়ার বিজ কড়চা : আপনি শেলটেকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শুরু থেকেই। এ প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য সম্পর্কে বলবেন?
তৌফিক এম সেরাজ : শেলটেক ১৯৮৮ সাল থেকে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। আমরা শুরু থেকেই চেষ্টা চালিয়ে আসছি রিয়েল এস্টেট সেক্টরে একটি পৃথক ধারা বজায় রাখতে। বিভিন্ন সময় এর উত্থান-পতনও হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। গত কয়েক বছর ধরে বেশ বড় বড় প্রকল্প হাতে নিচ্ছি। এসব প্রকল্পে ন্যূনতম ১০০টি করে অ্যাপার্টমেন্ট থাকছে। আগামী বছর থেকে একই জায়গায় ২০০ অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের পরিকল্পনা নিতে যাচ্ছি। এ অবস্থায় আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে সব কিছু যদি ঠিকঠাক মতো চলে তাহলে আগামী ২০১১ সালের মধ্যে শেলটেকও পুঁজিবাজারে আসবে। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করেছি। ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ ইউনিটের নির্মাণ কাজ হাতে থাকবেÑ এটি যখন আমরা নিশ্চিত হবো তখন অবশ্যই পুঁজিবাজারে আসবো। আশা করছি, ২০১১ সালের মধ্যে সে লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে।
শেয়ার বিজ্ কড়চা : এ মুহূর্তে সরকারের কাছে আপনাদের প্রত্যাশা কি?
তৌফিজ এম সেরাজ : এ মুহূর্তে নতুন কিছু প্রত্যাশা করছি না। সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে নিয়মনীতির বেড়াজালে হাত-পা বেঁধে ফেললে ব্যবসা করা যাবে না। যে কোনো সেক্টরেই ভালো-মন্দ ব্যবসায়ী থাকেন। কেউ হয়তো ইচ্ছা বা অনিচ্ছা যে কারণেই হোক ভালো করতে পারেন না। এজন্য পুরো সেক্টরকে যদি নতুন নতুন আইনের বেড়াজালে বেঁধে ফেলা হয় তাহলে অগ্রসর হওয়া কঠিন হবে।
শেয়ার বিজ্ কড়চা : আপনারা দীর্ঘদিন উচ্চ মধ্যবিত্তের জন্য আবাসন পরিকল্পনা করেছেন। পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে আপনাদের আবাসন সম্প্রসারণ পরিকল্পনাটি কেমন?
তৌফিক এম সেরাজ : আমরা যখন পুঁজিবাজারে আসবো তখন আমাদের আবাসন পরিকল্পনা হবে যারা নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণী তাদের নিয়ে, উচ্চবিত্তের আবাসন নিয়ে নয়। আমাদের ভবিষ্যতে পরিকল্পনা হলো সীমিত আয়ের পরিবার যাতে ভাড়ার টাকায় অ্যাপার্টমেন্টের মালিক হতে পারেন সে ধরনের প্রকল্প হাতে নেয়া। ঢাকার প্রান্তিক এলাকাগুলোতে বড় বড় প্রকল্প হাতে নিয়ে বাস্তবায়ন করবো। পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করে স্যাটেলাইট শহর বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেবে শেলটেক।
শেয়ার বিজ্ কড়চা : এ পর্যন্ত শেলটেকের বাস্তবায়িত প্রকল্পের সংখ্যা কতটি? এ মুহূর্তের কার্যক্রমই বা কেমন?
তৌফিক এম সেরাজ : এ পর্যন্ত ১০০টির বেশি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে শেলটেক। ২ হাজারেরও বেশি অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি ও হস্তান্তর করা হয়েছে। এ মুহূর্তে ১ হাজারের বেশি ইউনিট নির্মাণাধীন। আগামী বছরগুলোতে কয়েক হাজার ইউনিট বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা সুনাম ঠিক রেখে নিজেদের অগ্রসর করার চেষ্টা চালাচ্ছি।
শেয়ার বিজ্ কড়চা : পুঁজিবাজারের খবর নিয়ে একটি দৈনিক পত্রিকা হিসেবে ‘শেয়ার বিজ্ কড়চা’কে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
তৌফিক এম সেরাজ : যারা এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তারা এ পত্রিকার মাধ্যমে উপকৃত হবেন বলেই মনে করছি। আগে এ ধরনের পত্রিকা ছিল না। এ পত্রিকা নিশ্চয়ই শেয়ারবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের উপকারে আসবে।
শেয়ার বিজ্ কড়চা : আপনাকে ধন্যবাদ সময় দেয়ার জন্য।
তৌফিক এম সেরাজ : ধন্যবাদ ‘শেয়ার বিজ্ কড়চা’কে।
0 comments:
Post a Comment